১৭৯৮ সালে একজন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ একটি সাড়া জাগানো তত্ত্ব প্রদান করেন। যেই তত্ত্বটির মুল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল জনসংখ্যা ও খাদ্য প্রাপ্তির ভবিষ্যত। তার দেওয়া এই তত্ত্ব অনুসারে ভবিষ্যৎ খাদ্য প্রাপ্তির এক অনিশ্চয়তা প্রকাশ পায়। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাত্রাতিরিক্ত হারের ফলে সেই বিশাল জনসংখ্যার জন্যে খাদ্য সরবারাহ অসম্ভব। ম্যালথুজ বলেন,
“Nature is a table those who are uninvited must starve.”
ম্যালথুজ তার উক্তির জন্যে বিভিন্ন ভাবে সমালোচিতও হতে থাকেন। তার উক্তির বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা স্পষ্টই প্রতীয়মান হতে থাকে সমালোচকদের কাছে। আজ সে সকল সমালোচনার এক বিশেষ দিক নিয়েই আমার এই আলোচনা।
বিজ্ঞানী ম্যালথুজ, আধুনিক কৃষি বা Modern Agriculture সম্পর্কে কোন ধারনা পোষন করতে পারেননি। কৃষির আধুনিকায়নে যেসব উপাদান গুরুত্ব রেখেছে তাদের মধ্যে GMO এর অবদান অনবদ্য।
GMO শব্দটি Generically Modified Organism এর সংক্ষিপ্ত রুপ। প্রতিটি জীব এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রনকারী একটি অংশ থাকে। যার নাম জীন। ধরা যাক একটি গাছের পাতা সবুজ। এই গাছের পাতা সবুজ কেননা এতে ক্লোরোফিল আছে এবং গাছে ক্লোরোফিল তৈরী হয় কারন গাছে ক্লোরোফিল তৈরী করতে পারে এরকম জীন আছে। মানুষের শরীরে ১১ নং ক্রোমোজমটির কারনে ইনসুলিন তৈরী হয়। এই জীনটিই পৃথক করে যখনই.কোলাই ব্যাকটেরিয়া তে প্রবেশ করানো হয় তখন সেই ব্যাকটেরিয়া ইনসুলিন প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। আর ঠিক এভাবেই প্রস্তুত করা ইনসুলিন অজস্র রোগীর জীবন বাচাচ্ছে। এই জীনগত ভাবে পরবির্তন আনা ব্যাকটেরিয়া কেই বলা হয় GMO.
এবার আসা যাক কৃষির সাথে এর সম্পর্কটা কোথায়। আমাদের দেশে একটা সময় যে ধান এর চাষ করা হতো তা ছিল অনেকটাই উচু জাতের। যা সহজেই বাতাসে হেলে যেত বা ভেঙে পড়তো। আবার যেসকল জাত খাটো জাতের সেগুলোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম কিংবা তাপ মাত্রার প্রতি বিশেষ ভাবে সংবেদনশীল হওয়ায় তা বছর জুড়ে সর্বত্র চাষের যোগ্য নয়। তাই এক বিশেষ প্রক্রিয়াতে উঁচু জাতের ধানে খাটো প্রজাতির জীন প্রবেশ করিয়ে সেটিকে চাষ উপোযগী করে তোলা হয়েছে। যা সরবছর সর্বত্রই চাষ করা যাচ্ছে। এভাবেই মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুধু ধানই নয়, প্রায় প্রতিটি ফসল এর GMO বর্তমানে চাষ হচ্ছে। Bt বেগুন এক অনন্য উদাহরন। এক বিশেষ জীন প্রবেশ করিয়ে একে পোকামাকড় বিরোধী করে তোলা হয়েছে। যার ফলে একে পোকামাকড় এর আক্রমণ এর ঝামেলা নেই। অন্যদিকে ক্ষতিকর কীটনাশক এর ব্যবহারও নেই।
এবার জিএমও এর স্বাস্থ্যঝুকি এর ব্যাপার টা নিয়ে আলোচনা করা যাক। এখন পর্যন্ত জিএমও এর স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়ে কোন জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই জিএমও এর গ্রহণে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই। তবে অনেকেই এর বিরোধীতা করেন। এখানে বিরোধীতার ব্যাপারটা আসলে অনেকটাই Ethical বা নৈতিক। আপনি কেনই বা প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করবেন? কেনইবা দুটি ভিন্ন প্রজাতিতে জোরপূর্বক মিলন ঘটানো হবে!
তবে এই বহুল জনসংখ্যার খাদ্য যোগান অবশ্যই এসব প্রশ্নের থেকে বড় নয়।
আজ এই লেখাটি আর বড় করতে পারছিনা মশার কামড়ের জন্যে। ইশ, যদি BT বেগুনের মতন আমিও জীন ট্রান্সফার করে মশার কামড় প্রতিরোধী হতাম!
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021