শাকসবজি ও ফলমুলে বিভিন্ন ধরণের খনিজ অভাবজনিত রোগ দেখা যায়। এগুলোর উৎপাদন কমিয়ে দেয়, ফল-সবজির কাঙ্ক্ষিত মূল্য হ্রাস করে ও খাদ্যের মান কমিয়ে দেয়। এসব ব্যাপারে চাষাবাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়।
ক্লোরিনের অভাব জনিত লক্ষণ
টমেটো
৩-৪ সপ্তাহ বয়সী টমেটো গাছ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে গাছের শাখা বৃদ্ধি ৭০% পর্যন্ত কমে যায় এবং শিকড়ের বৃদ্ধি কমে যায় ৫০% পর্যন্ত। ক্লোরিনের অভাবে পাতার সংখ্যা কমে যায়, ছোট পাতা গজায় ও পাতার কিনারা কোঁকড়ানো হয়। শিকড় ছোট হয়ে যেতে থাকে এবং চারা এক টানে মাটি থেকে তুললে শিকড় মাছের কাঁটার মত দেখায়।
আলু
প্রথমে গাছের রঙ ফিকে সবুজ হয় এবং নতুন বের হওয়া পাতা স্ফটিকের মত দেখায়। তীব্র অভাবে ডগার পাতাগুলোর কিনারা উপরের দিকে বেঁকে যায় এবং পত্রাংশের আগায় হলুদ রঙ ধরে। হলদে রঙ পত্রাংশের কিনারা বরাবর ছড়িয়ে পড়ে।
পালংশাক
শেকড়ের বৃদ্ধি কমে গিয়ে মাছের কাঁটার মত হয়ে যায়। নতুন পাতায় হলদে দাগ পড়ে। অনেক সময় পাতার মধ্যশিরা বেঁকে গিয়ে পাতা কাপ আকৃতি ধারণ করে।
বাঁধাকপি
কচি গাছের ডগা ও কিনারা ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করে। পাতা উপরের কিংবা নিচের দিকে বেঁকে যায়। তীব্র অভাবে নতুন পাতা হলদে হয়ে যায়। আরও পড়ূন শাক-সবজির বোরন ও মলিবডেনামের অভাবজনিত রোগ।
জিংকের অভাব জনিত লক্ষণ
আলু
জিংকের অভাবে আলু গাছে ‘ফার্ণ লিপ’ বা ‘বিটল লিপ’ দেখা যায়। জিংকের অভাবে আলু গাছের কচি পাতা ক্ষুদ্রাকৃতি ধারণ করে। কচি পাতা হলদে ভাব ধরে অনেক সময় সরু হয় ও আগা থেকে শুকানো শুরু করে। শেষে পাতা কান্ড থেকে আলাদা হয়ে ঝরে পড়ে যায়।
টমেটো
টমেটো একটি দস্তা বা জিংক সংবেদনশীল গাছ। জিংকের প্রতি টমেটো খুবই সহজেই সাড়া দেয়। তাই দস্তা বা জিংকের অভাব হলে তরুন টমেটো গাছের পাতা ছোট হয়ে যায় এবং সেসব পাতায় শিরার মধ্যবর্তী স্থানসমূহে হলদে ও ক্ষুদ্র ফোঁটা ফোঁটা দাগ পড়ে।
ধীরে ধীরে একই লক্ষণ বয়স্ক পাতাতেও প্রকাশ পায়। পাতা নিচের দিকে কুঁকড়ে যায়। নিচের বয়স্ক পাতা বাদামী কমলা রঙের হয়ে শুকিয়ে যায়। গাছ বেঁটে হয়।
লাউ ও কুমড়া
পাতার আকার ছোট হয়ে যায়। পাতায় আন্তঃশিরা ক্লোরোসিস দেখা যায়, পরে সেসব জায়গা মরে শুকিয়ে যায়। পর্বমধ্য খাটো হয়ে আসে। পুরাতন পাতায় লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
শিম
কচি পাতা হালকা সবুজ হয় এবং পাতার আগা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। কিনারাও হলুদ হয়। পাতায় আন্তঃশিরা ক্লোরোসিস দেখা দেয়। পাতা বিকৃত ও খাটো হয়ে যায়। পুরনো পাতার শিরার মধ্যবর্তী জায়গা মরে যেতে থাকে। কুঁড়ি ও ফল নষ্ট হয়ে যায়। গাছ খাটো হয়ে নেতিয়ে পড়ে। তীব্র অভাব দেখা দিলে নতুন পাতা সাদা হয়ে মরে যায়। পুরো জমিতে লক্ষণ প্রকাশিত না হয়ে শুধুমাত্র অল্প কিছু গাছেও জিংকের অভাব জনিত লক্ষণ দেখা যেতে পারে। আরও পড়ুন প্যাশন ফল পরিচিতি ও চাষ সম্ভাবনা।
ম্যাঙ্গানিজের অভাব জনিত লক্ষণ
লাউ ও কুমড়া
নতুন পাতায় অন্তঃশিরা ক্লোরোসিস হয়। মধ্যশিরা ও অন্যান্য শিরা সবুজ থাকে। তবে পুরনো পাতাতেও এই ধরণের লক্ষণ দেখা যায়।
টমেটো
ম্যাঙ্গানিজের অভাব হলে টমেটো গাছের নতুন পাতায় অন্তঃশিরা ক্লোরোসিস হয় অর্থাৎ শিরার মধ্যবর্তী স্থানসমূহ হলদে হয়ে যায়। ক্লোরোসিসে বিবর্ণ পাতা ধীরে ধীরে মরে যায়। এতে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় ও ডগার পাতা শুকিয়ে যায়।
আলু
গাছ বেঁটে হয়ে যায়। শাখার আগা শুকিয়ে আসে ও নতুন পাতার পত্রফলক ছোট হয়ে আসে। পাতা একটু হলদে ভাব ধারণ করে এবং পাতা কিনারা থেকে গুটিয়ে যায়।
বাঁধাকপি
মাঝ বয়সী পাতায় অন্তঃশিরা ক্লোরোসিস হয়। পাতার কিনারা টামাটে হয়ে যায় ও ভেতরের দিকে কুঁকড়ে যায়। নতুন পাতাতেও একই লক্ষণ হয়। পাতা ছোট হয়ে যায়।
ফুলকপি
নতুন পাতায় অন্তঃশিরা ক্লোরোসিস হয় । পাতার কিনারা তামাটে হয়ে যায় ও ভেতর দিয়ে কুঁকড়ে যায় পরে পুরনো পাতাতেও এ লক্ষণ প্রকাশ পায়। এতে পাতা বিকৃত হয়ে যায়।
শিম ও বরবটি
পাতায় আন্তঃশিরা ক্লোরোসিস হয়। মাঝে মাঝে সাদা হয়ে যায়। বীজ পত্রের ভিতরের দিকে কেন্দ্রে বাদামী দাগ দেখা যায়। তীব্র অভাবে পাতা হলদে হয়ে ঝরে পড়ে। আরও পড়ুন ভিয়েতনামী জাতের নারিকেল চাষ।
লেটুস
পাতার আন্তঃশিরা হয়ে যায় ও পরে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। মধ্য শিরা ও অন্য শিরা সবুজ থাকে।
মটরশুঁটি
মাঝ বয়সী পাতায় আন্তঃশিরা ক্লোরোসিস হয়। শিরা সবুজ থাকে। ক্লোরোসিস অংশে বাদামী দাগ দেখা যায়।
পালংশাক
পাতায় আন্তঃশিরা ক্লোরোসিস হয়। মধ্যশিরা ও অন্যান্য শিরা সবুজ থাকে।
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020