মূলা একটি সুস্বাদু মূলবিশেষ সবজী, রোমানদের আগে ইউরোপে এটি একটি ঘরোয়া খাবার ছিল। সারা বিশ্বেই মূলা চাষযোগ্য, এটি কাঁচা সালাদ সবজী হিসাবেই সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়। মূলা অনেক বৈচিত্রময়, আকারে আলাদা, গন্ধযুক্ত, বিভিন্ন রং এবং পরিপক্ক হওয়ার সময়ের বিভিন্নতা রয়েছে।
মূলায় গন্ধ থাকে কেন?
মূলা গাছ দ্বারা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হওয়ার কারনে এটি তীব্র গন্ধযুক্ত হয়, যার সাথে যুক্ত থাকে গ্লূকোসাইনোলেট, মাইরোসিনাস এবং ইসোথিওসায়ানেট। মূলা কখনও কখনও অন্যান্য সবজীর সাথে সহচর সবজী হিসাবে জন্মায়।
জমি ও মাটি
উঁচু, মাঝারি উঁচু ও মাঝারি নিচু জমিতে মূলা চাষ করা যায়। সুনিষ্কাশিত বেলে দো-আশ মাটি মূলা চাষের জন্য উপযুক্ত। এটেল মাটিতে মূলার আকার বেশি করতে দেয় না। মূলা চাষের জন্য জমির মাটিকে গুড়ো গুড়ো করে নিতে হয়। ছাই ও জৈব সার বেশী ব্যবহারে মূলার বাড় ভাল করতে সাহায্য করে।
জাত
একসময় জাপানের বিখ্যাত তাসাকি সান জাতের মূলার মাধ্যমে এ দেশে উচ্চফলনশীল মূলার আবাদ শুরু হলেও এখন মূলার প্রায় ২৫টি জাত চাষ হচ্ছে। আসছে নিত্য নতুন স্বল্প জীবনকালের অধিক ফলনশীল হাইব্রিড জাত।
উল্লেখযোগ্য জাত সমূহ হল বারি মূলা ১, বারি মূলা ২, বারি মূলা ৩, এভারেষ্ট, হোয়াইট প্রিন্স, বিপ্লব ৯৪, হিমালয় এফ১, সুপার ৪০, মুক্তি এফ১, তাসাকী, কুইক ৪০, রকি ৪৫, হোয়াইট রকেট, হোয়াইট ৪০, জি চেটকি, সুফলা ৪০, বিএসবিডি ২১০১ এফ১,আনারকলি, দুর্বার, রকেট এফ১, সামার বেষ্ট এফ-১, হ্যাভেন এফ-১, মিনো আর্লি লং হোয়াই, বরকতি ৪০ এফ-১, পাইলট এফ-১, সিগমা ৪০ ইত্যাদি।
বীজ হার ও বপন
আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ মূলার বীজ বপন করা হয়। প্রতি হেক্টরে বপনের জন্য ২.৫-৩.০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সাধারণতঃ ছিটিয়ে বীজ বপন করা হয়। তবে সারিতে বপন করলে পরিচর্যার সুবিধে হয়। সারিতে বুনতে হলে এক সারি থেকে আর এক সারির দূরত্ব দিতে হবে ২৫-৩০ সেমি.।
পরিচর্যা
বীজ বপনের ৭-১০ দিন পর অতিরিক্ত চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। ৩০ সেমি. দূরত্বে একটি করে চারা রাখা ভাল। মাটিতে রস কম থাকলে সেচ দিতে হবে। আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। মাটি শক্ত হয়ে গেলে নিড়ানী দিয়ে মাটির উপরের চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা
মূলা পাতার বিটল বা ফ্লি বিটল পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে খেয়ে ফেলে। এ ছাড়া করাত মাছি বা মাস্টার্ড স’ ফ্লাই, বিছা পোকা ও ঘোড়া পোকা এরাও মূলার পাতা খেয়ে ক্ষতি করে। বীজ উৎপাদনের সময় জাব পোকার আক্রমণ দেখা দেয়।
রোগ ব্যবস্থাপনা
মূলার পাতায় অল্টারনারিয়ার দাগ একটি প্রধান সমস্যা। এছাড়াও মূলায় সাদা দাগ দেখা যায়। ফসল সংগ্রহ ও ফলন হওয়া মূলা শক্ত হয়ে যাওয়ার আগেই তুলে ফেলতে হবে। অবশ্য এখন হাইব্রিড জাতসমূহ আসাতে এ সম্ভাবনা অনেক কমে গেছে। তবুও কচি থাকতেই মূলা তুলে ফেলতে হবে। এতে বাজার দাম ভাল পাওয়া যায় এবং স্বাদও ভাল থাকে।
ফলন
জাত ভেদে হেক্টর প্রতি মূলার ফলন হয় ৪০-৬০ টন হয়ে থাকে।
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021