আপনার যদি এলার্জির সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার ঘরের উদ্ভিদগুলোকে যাচাই করে দেখা উচিত। কিছু দরকারি ঘরোয়া উদ্ভিদ রয়েছে যা আপনাকে এলার্জির সমস্যা থেকে বাঁচাতে পারে।
কিছু বছর আগে আমি নতুন বাসায় উঠি। তখন আমি সবে গ্রাজুয়েশন শেষ করি। আমি কিছুদিনের জন্যে থাকতে বাসাটি নিই।
এটি ২ বেডের এপার্টমেন্ট ছিল, পুরো ঘরই কার্পেট করা। বাসায় এয়ার কন্ডিশন ছিল। প্রথম বছরেই ওই বাসায় থেকে আমার এলার্জির সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
বাসা বদ্ধ রাখতাম শীতকালে। খুব অল্প পরিমান বায়ু প্রবেশের সুযোগ ছিল। এ জন্যে ঘরের ভিতর বেশ গুমোট আবহাওয়া হয়ে যায়।
আমার বেশ অস্বস্তি অনুভূত হত, কি জন্যে তা জানতাম না। সেই মুহূর্তে আমার এলার্জি টেস্ট করাইনি, জানতাম না কেনো এমন হচ্ছিল।
খুব শীঘ্রই বুঝতে পারলাম ঘরের বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা খুবই দূর্বল। কার্পেট অনেক বছর ধরে পরিষ্কার করা হয়নি। শীঘ্রই আমি সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা হাতে নিলাম। আমার ঘরের বায়ুর মান ও সঠিক আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্যে কাজ করা শুরু করলাম। খুব শীঘ্রই বুঝতে পারলাম ঘরোয়া উদ্ভিদ বায়ুর বিষাক্ত ধূলিকণা খুব সহজেই গ্রহণ করে নেয় ও শুষ্ক বাতাসে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা সরবরাহ করে।
আমার স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কিছু আমি বেডরুমের জন্যে কিছু ঘরোয়া উদ্ভিদ কিনে ফেললাম। উদ্ভিদগুলো ঘরের সৌন্দর্য্য আরও বৃদ্ধি করল। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সহায়তা করলাম ঘরের বাতাসে মানোন্নয়ন ও আর্দ্রতা বজায় রাখতে।
এরপর আমি আমার এলার্জি পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারি ধূলিকণাতে আমার প্রচুর এলার্জি রয়েছে। ডাক্তার আমাকে ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখতে বললেন ও ধূলিকণা,পরাগ রেণু, রাসায়নিক পদার্থ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে বললেন। সহজে পরিচর্যা করা যায় এমন কিছু ঘরোয়া উদ্ভিদ সম্বন্ধে জানতে পড়ুন এই লেখাটি।
আমি আমার ঘরের বেশ বড় পরিবর্তন আনা শুরু করলাম।তখন থেকেই। আমি কিছু বায়ু পরিষ্কার সহায়তাকারী উদ্ভিদ প্রতিটি রুমে রুমে রাখা শুরু করলাম। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বায়ু নির্মলকারী উদ্ভিদ ও কিছু এলার্জির বাড়িয়ে তোলা উদ্ভিদে ব্যাপারে সবার সাথে শেয়ার করব।
যেসব ঘরোয়া উদ্ভিদ এলার্জির সমস্যা বাড়িয়ে তোলে
সেরা কিছু বায়ু নির্মলকারী উদ্ভিদের ব্যাপারে জানানোর আগে আসুন জেনে নিই কোন কোন উদ্ভিদ আপনার এলার্জি বাড়িয়ে দিতে পারে। দুইটি বিষয় সবসময় মাথায় রাখবেন।
চিতি বা মোল্ড
কিছু সুপরিচিত ঘরোয়া এলার্জিক উদ্ভিদ চিতি বা মোল্ড থেকে আসে। মাটি বেশি ভিজা থাকলে মোল্ড বা চিতি কন্টেইনারের মাটির মধ্যে কিংবা আশেপাশে বেড়ে ওঠে।
মোল্ডের সমস্যা আর্দ্র গরমেও বেড়ে যেতে পারে যখন মাটি খুব দেরিতে শুষ্ক ভাব আসে। সৌখিন বাগানীরা নিচের পদ্ধতিতে পানি দিতে পারেন-
মাটির আর্দ্রতা আমরা সহসা চোখ দিয়ে দেখেই নিশ্চিত হতে পারি না। এজন্যে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে ৩-৪ ইঞ্চি গভীরতা পর্যন্ত মাটির অবস্থা দেখা উচিত। মাটির উপরিভাগ খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে গেলেও ১ ইঞ্চি নিচেই অনেক সময় ভেজা থাকতে পারে।
কিছু মানুষ মাটির উপরে শুষ্কতা দেখলেই পানি দেয়। এই অভ্যাস গাছের জন্যে খুবই ক্ষতিকর।
পরাগ
সবচেয়ে বেশি এলার্জির সমস্যা হতে পারে উদ্ভিদের পরাগ থেকে। ছোট উদ্ভিদ বা পাম জাতীয় গাছের জন্যে স্ত্রী উদ্ভিদ বাছাই করাই শ্রেয়। অনেক বেশি প্রাগ থাকা এলার্জির সমস্যা সৃষ্টি করে না যদি তা বায়ুবাহিত না হয়।
আপনার যদি অনেকরকম ঘরোয়া উদ্ভিদ থাকে এবং মোল্ড বা চিতি ও পরাগের জন্যে দূঃশ্চিন্তা হয় এক্ষেত্রে আপনি ঘরে আলাদা করে এয়ার পিউরফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এয়ার পিউরিফায়ার ছোট বা বড় যেকোনো আকৃতির ঘরেই বাতাস পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। স্নেক প্ল্যান্ট সম্বন্ধে জানতে পড়ুন এই লেখাটি।
যেসব উদ্ভিদ এলার্জির সমস্যা তৈরি করতে পারে
ফুলের তোড়া বা বুকে হিসেবে আমরা যেসব ফুল, উদ্ভিদের অংশবিশেষ ব্যবহার করে থাকি সেগুলো বেশ আকর্ষণীয়, সুগন্ধযুক্ত এবং প্রচুর পরাগ সমৃদ্ধ। ফুলের তোড়া বা বুকে কোনো ঘরোয়া উদ্ভিদ না হলেও এটি তৈরিতে ব্যবহৃত উদ্ভিদগুলো অনেকসময়ই আমরা ঘরে রাখি। বুকে ফুলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলঃ
ডেইজি – প্রচুর পরাগ থাকে এই ফুলে।
সূর্যমুখী – এই ফুলের পরাগ এলার্জিক সংক্রমণে সহায়তা করে।
চন্দ্রমলিকা – এটি সূর্যমুখীর মতোই।
বনসাই – বিশেষ উদ্ভিদ
অশ্বত্থ – এই উদ্ভিদে মোমের মতো তরল নিঃসৃত হয় যা ধূলিকণার সাথে মিশ্রিত হয়ে এলার্জির সৃষ্টি করে।
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020