Table of Contents
আম নিয়ে আমজনতার মনে কৌতুহলের কমতি নেই। গ্রীষ্মকালের গরমে যতোই কষ্ট হোক কিংবা কালবৈশাখী ঝড়ের যতোই ভয়াবহতা থাকুক না কেনো আমের মতো সুমিষ্ট ফলের স্বাদ গ্রহণের জন্য সব কিছুই মেনে নিতে রাজি তারা। প্রাচীন বাংলার আবহমান কাল থেকেই বাঙালি সংস্কৃতির সাথে আম ওতপ্রতোভাবে জড়িত। শৈশবের সেই নানি-দাদিদের আমসত্ত্ব শুকানো কিংবা ঝড়ের দিনে হুটোপুটি করে আম কুড়ানোর দৃশ্য এখনো বিদ্যমান মস্তিষ্কের স্মৃতিকোণে। পল্লীকবির জসীমউদ্দীনের লেখা ‘মামার বাড়ি’ কবিতা।
‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে/আম কুড়াতে সুখ,/পাকা জামের শাখায় উঠি/রঙিন করি মুখ।’
কবিতার লাইনগুলো যেনো বাংলার ছেলেমেয়েদের চিরায়িত শৈশব স্মৃতি। ঝড়ের দিনে কুড়োনো কাঁচা আম লবণ মরিচ দিয়ে খাওয়া হোক কিংবা আমসত্ত্ব, আচার, আমডাল তৈরিতে ব্যবহার করা হোক – বাচ্চা বুড়ো সকলেই লুফে নেয় এক পলকে। আবার পাকা-কাঁচা আমের জনপ্রিয়তা কেবল ফল হিসাবেই না, বিভিন্ন রান্নাতেও রয়েছে আমের বিবিধ ব্যবহার। আমের মৌসুমে আমের আচার, আমসত্ত্ব, আমের মোরব্বা, চাটনী থেকে শুরু করে আমের পুডিং, কুল্ফি, আমপারা শরবত, আমের জ্যাম, জেলী, আমের পায়েস ইত্যাদি মুখরোচক খাবারে সয়লাব থাকে বাঙালির রসুইঘর। আর তাই ঘরে থাকা অল্প কিছু উপকরণ আর কাঁচা পাকা আম নিয়ে গ্রিনিকালচারের আজকের আয়োজনে থাকছে সারা বছর সংরক্ষণ করে রেখে খাওয়া যাবে এমন কিছু রেসিপিঃ
1 পাকা আমের আমসত্ত্ব
উপকরণ
পাকা আমঃ ৩০০ গ্রাম
বিট লবণঃ ১/২ চা চামচ
চিনিঃ ১/৩ কাপ চিনি
ভাজা মশলা(ধনিয়া, জিরা, শুকনা মরিচ চুলায় টেলে গুড়া করে নেওয়া)ঃ স্বাদ মতো
সয়াবিন তেল- ১ টেবিল চামচ
লবণ- স্বাদ মতো
প্রণালি
১। একটু শক্ত থাকা অবস্থায় পাকা আম নিয়ে নিয়ে খুব ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরা করে নিতে হবে।
২। এবার ব্লেন্ডরে অল্প অল্প করে আম দিয়ে, খুব সামান্য পরিমাণে পানি মিশিয়ে ব্লেন্ড করে পাল্প বানিয়ে নিতে হবে। পাল্পে আঁশ থাকলে একটা পরিষ্কার কাপড় অথবা চালনিতে নিয়ে আঁশ গুলোকে আলাদা করে নিতে হবে।
৩। পাল্পগুলোকে একটি পাত্রের মধ্যে নিয়ে তারে স্বাদ মতো লবণ, আধা চা চামচ বিট লবণ, স্বাদ মতো ভাজা মশলা, চিনি এবং সয়াবিন তেল মিশিয়ে চুলায় মাঝারি আঁচে কিছুক্ষণ জ্বাল করে নিতে হবে।
৪। মিশ্রণটি ঘন হয়ে আসলে চুলা থেকে নামিয়ে একটি ছড়ানো পাত্র/ ট্রেতে পার্চমেন্ট পেপারের ( পার্চমেন্ট পেপার না থাকলে পাত্রের উপর সরিষার তেল ব্রাশ করে নিতে হবে) উপর সমান ভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।
৫। এবার রোদে কিংবা চুলায় অল্প আঁচে আমসত্ত্ব টাকে শুকিয়ে নিতে হবে। বাকি মিশ্রণ এয়ার টাইট বক্সে করে নরমাল ফিজে রেখে দিতে হবে। প্রথম লেয়ার শুকিয়ে গেলে এর উপর আরেক লেয়ার এবং পরবর্তীতে আরেক লেয়ার করে দিতে হবে। অর্থাৎ মোট তিন লেয়ারে করে শুকিয়ে নিতে হবে।
এয়ার টাইট কন্টেনারে ভরে এক থেকে দেড় বছর ধরে এই আমসত্ত্ব খাওয়া যাবে।
2 আমের মোরব্বা
উপকরণ
কাঁচা আমঃ ২ টি বড় সাইজের
চিনিঃ পৌনে দুই কাপ
লবণঃ স্বাদ মতো
পানিঃ ১ কাপ
দারুচিনিঃ ২ টুকরা
প্রণালী
১। প্রথমে ফ্রেশ কাঁচা আমগুলোর খোসা ছাড়িয়ে খুব ভালো করে ধুয়ে প্রতিটি আম দুই টুকরা করে আঁটি ফেলে দিতে হবে। কাঁটা চামচ দিয়ে আমগুলোকে এমন ভাবে কেচে নিতে হবে যেনো চামচ আঁটি পর্যন্ত পৌছে।
২। আমগুলোকে পরিষ্কার পানিতে কিছুক্ষণ রেখে চিপে চিপে নিতে হবে যাতে আম থেকে টক পানি বের হয়ে যায়। এবার একটি পাত্রে গরম পানি (ফুটন্ত নয়) নিয়ে তাতে আমগুলোকে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে আবার আমগুলোকে পানি থেকে উঠিয়ে চিপে নিতে হবে।
৩। কড়াইতে আম নিয়ে এর মধ্যে চিনি,পানি,দারুচিনি,লবণ মিশিয়ে মিডিয়াম লো আঁচে রেখে ফোটাতে হবে। প্রায় ১ ঘন্টা ফোটানোর পর সিরা ঘন এবং আম সিদ্ধ হয়ে আসলে নামিয়ে নিতে হবে।
বয়ামে ভরে নরমাল ফ্রিজে রেখে ১ সপ্তাহ এবং ডিপ ফ্রিজে রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
3 পাকা আমের জ্যাম
উপকরণ
আমঃ ১.৫-২ কাপ
চিনিঃ ২ কাপ
লেবুর রসঃ ২ টেবিল চামচ
প্রণালী
১। পাকা আম খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরা করে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এবার পাল্পটুকুকে চালনিতে চেলে আঁশ আলাদা করে ফেলে দিতে হবে।
২। এবার একটি পাত্রে আমের পাল্প নিয়ে তাতে চিনি এবং লেবুর রস মিশিয়ে চুলায় হাই হিটে জ্বাল করে নিতে হবে। চামচ দিয়ে অনবরত নাড়াচাড়া করতে হবে যেনো তলায় পুড়ে না যায়।
৩। মিশ্রণ টি ঘন হয়ে আসলে গরম অবস্থাতেই বয়ামে ঢেলে সংরক্ষণ করতে হবে। ৩০ মিনিটের মধ্যেই মিশ্রণ টি জমে জ্যামে পরিণত হবে।
ফ্রিজে রেখে ৫-৬ মাস পর্যন্ত জ্যামটি সংরক্ষণ করা যায়।
4 কাঁচা আমের টক মিষ্টি আচার
উপকরণ
আমঃ ১ কেজি (আঁটি শক্ত হয়ে গেছে এমন আম)
ধনিয়াঃ ১ টেবিল চামচ
পাঁচ ফোড়নঃ ১ টেবিল চামচ
শুকনা মরিচঃ ৪-৫ টি
সরিষার তেলঃ ১ কাপ
জিরাঃ ১ চা চামচ
রসুনঃ ১/৩ কাপ
হলুদ গুঁড়াঃ ১ চা চামচ
লবণঃ ১ টেবিল চামচ
চিনিঃ ১/২ কাপ
ভিনেগারঃ ৩ টেবিল চামচ
প্রণালী
১। আমগুলোকে ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে খোসা এবং বাট সহ টুকরো টুকরো করে কেটে নিতে হবে।
২। শুকনো কড়াইতে ধনিয়া, পাঁচ ফোড়ন এবং শুকনা মরিচ টেলে নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। অন্যদিকে আমের টুকরাগুলোতে লবণ, হলুদ মাখিয়ে ১ ঘন্টা রোদে রেখে দিতে হবে।
৩। কড়াইতে সরিষার তেল দিয়ে তাতে জিরা ফোঁড়ন দিয়ে রসুনগুলো দিয়ে ভেজে নিতে হবে। এবার রোদে দেওয়া আমের টুকরা গুলোকে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
৪। মিনিট খানিক মেশানোর পর হলুদ,লবণ,চিনি,ভিনেগার দিয়ে ভালো করে রান্না করে নিতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ রান্না করার পর আমগুলো যখন সিদ্ধ হয়ে যাবে এবং উপরে তেল ভেসে উঠবে তখন আচার নামিয়ে নিতে হবে।
ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে আচার তৈরি করে ১ বছর পর্যন্ত নরমাল তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়।
আরও পড়ুনঃ ঘরোয়া উপায়ে আম সংরক্ষণ
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021