আপনার কর্মস্থলের ডেস্কে ডেইজি ফুলের গাছ কিংবা ফাইলের ক্যাবিনেটের পাশে একটি মানিপ্ল্যান্ট ডেস্কের সৌন্দর্য্য বাড়ানোর পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিও বাড়িয়ে দিবে কয়েকগুণ। অফিসে ফাইল, ল্যাপটপ, কলম, পেপারের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া উদ্ভিদ যুক্ত করে খুব সহজেই বিশুদ্ধ অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেন।
আমাদের জীবনের ৯০ শতাংশ সময় আমরা ঘরের ভিতরে অতিবাহিত করি। আমাদের বাড়ি বা অফিসের অভ্যন্তরীণ বায়ুর মান খারাপ হলে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা এবং ক্লান্তি থেকে শুরু করে চোখ, নাক এবং গলার জ্বালার মত নানবিধও স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
অফিসে ব্যবহৃত আসবাবপত্র, দালান তৈরির উপকরণ, ইন্টেরিওর এবং পরিচ্ছন্নতার কাজ ব্যবহৃত পণ্যগুলি থেকে বেশ কিছু বায়ু দূষণকারী পদার্থ নির্গত হয়। অভ্যন্তরীন বায়ুর গুণমান ফুলের পরাগ, ভাসমান ব্যাকটেরিয়া এবং মোল্ড দ্বারাও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। অপর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থার কারণে আপনার কর্মস্থলের বাতাসের গুণমান আরও খারাপ হতে পারে, বিশেষত যদি এটি কোনও পুরনো ভবন হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ঘরোয়া উদ্ভিদ মারা যাচ্ছে? বেশিদিন টিকিয়ে রাখার কিছু কৌশল
১৯৮৯ সালে, নাসা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, আমাদের গৃহমধ্যস্থ বায়ু দূষণ হ্রাসের জন্য কিছু ঘরোয়া উদ্ভিদ, আর্দ্রতা এবং বায়ুর ফিল্টার হিসেবে ফর্মালডিহাইড, বেনজিন এবং উদ্বায়ী জৈব যৌগগুলি এর মতো দূষণকারীগুলিকে শোষণ করতে সহায়তা করে এবং এর ফলে আপনার অন্দরের বাতাসের মানের উন্নতি ঘটে।
ঘরোয়া উদ্ভিদগুলি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজের ছেড়ে দিয়ে বায়ুকে পরিষ্কার করে। পটিং মাটিতে থাকা মাটির ব্যাকটেরিয়াও বাতাসের টক্সিনকে ভেঙে দিয়ে ভূমিকা রাখে।
সঠিক উদ্ভিদটি নির্বাচন করা
সবরকম উদ্ভিদ সবরকম পরিবেশের জন্যে উপযুক্ত না।
কিছু উদ্ভিদ, যেমন সাকুলেন্ট, ডেইজি, খেজুর এবং বার্ডস অব প্যারাডাইজের জন্যে প্রচুর সূর্যের আলো প্রয়োজন, তাই এগুলি জানালাবিহীন বদ্ধ ঘরের চেয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমমুখী জানালাওয়ালা অফিসগুলির পক্ষে বেশি উপযুক্ত।
অন্যদিকে, সোনালি পোথোস এবং ফার্নের মতো ঘরোয়া উদ্ভিদের পাতাগুলি যদি গাছগুলিকে সরাসরি সূর্যের আলোতে পুড়ে যায়; তাই এই গাছগুলি কম আলো বা ফিল্টার করা আলো পছন্দ করে। অর্থাৎ আপনি আলোবিহীন কক্ষেও এদের রাখতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ হাপানি ও এলার্জি প্রতিকারে ৭টি সেরা ঘরোয়া গাছ
আপনার অফিসের পরিবেশের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত উদ্ভিদগুলি বেছে নেওয়ার জন্য তাদের আলো-বাতাস, পুষ্টির প্রয়োজনীয়তাগুলো জেনে নিন পূর্বে। তাহলে আপনার জন্যে সুবিধা হবে কোন উদ্ভিদটি আপনার কর্মস্থলের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে।
নাসার গবেষণায় দেখা গেছে যে কার্যকরভাবে বায়ু বিশুদ্ধ করার জন্য প্রতি ১০০ বর্গফুটের জন্য একটি মাঝারি আকৃতির উদ্ভিদ ব্যবহার করা দরকার, যার অর্থ ১০’-বাই-১০’ ফুটের জন্যে একটি মাত্র উদ্ভিদ আপনার অফিসের কোণে রাখুন, এটি আপনার অফিসকক্ষের বায়ুর মানকে দারুনভাবে প্রভাবিত করবে।
২০১১ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, একটি শ্রেণিকক্ষে ছয়টি উদ্ভিদ কার্বন ডাই অক্সাইড, উদ্বায়ী জৈব পদার্থ এবং পার্টিকুলেট পদার্থের ঘনত্বকে হ্রাস করে। গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, “গাছপালা অভ্যন্তরীণ বাতাসের মান উন্নতি করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে।”
ঘরোয়া উদ্ভিদের আরও কিছু অবদান
ঘরোয়া উদ্ভিদ আপনার কর্মস্থলের ইন্টেরিওরকে সাজাতে এবং অভ্যন্তরীন বায়ুর মানের উন্নত করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করে। কর্মস্থলে রঙিন উদ্ভিদ থাকা আপনার কর্মস্পৃহা আশ্চর্যভাবে বাড়িয়ে তুলে।
জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজিতে প্রকাশিত ২০১৪ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যেসব কর্মস্থলে ঘরোয়া উদ্ভিদ ছিল, সেসব দপ্তরের কর্মীরা অন্যদের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি উত্পাদনশীল ছিলেন। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, গাছপালা মানসিক ধকল কমাতে সাহায্য করে এবং সৃজনশীলতার বাড়িয়ে তোলে।
অন্য এক গবেষণায় ক্যানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে, যেসব হাসপাতালে উদ্ভিদ ছিল তারা কম ব্যথার ওষুধ ব্যবহার করেছেন, তাদের মধ্যে রক্তচাপের প্রভাব কম ছিল এবং ক্লান্তি ও উদ্বেগ কম ছিল। যদি ঘরোয়া উদ্ভিদ হাসপাতালে এত বড় প্রভাব ফেলতে পারে, তবে কল্পনা করুন যে আপনার অফিস ডেস্কে কয়েকটি গাছপালা কর্মস্থলে আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় কতটা দারুন প্রভাব ফেলতে পারে!
অফিসে ঘরোয়া উদ্ভিদ রাখলে সর্দি, মাথা ব্যথা, কাশি এবং গলা ব্যথা কমাতে পারে। নরওয়ের একদল গবেষক দেখতে পান যে, কর্মস্থলে ঘরোয়া উদ্ভিদ কর্মীদের অসুস্থতার হার ৬০০ শতাংশেরও বেশি কমিয় ফেলে।
গাছপালা আপনার অফিসের সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে তোলার চেয়ে আরও বেশি কিছু করে। এই উদ্ভিদগুলি অভ্যন্তরীণ বায়ু মানের উন্নতি করা, উত্পাদনশীলতা বাড়ানো এবং আপনার স্বাস্থ্য কে বুস্ট আপ করে যা একটি ছোট উদ্ভিদের থেকে অনেক বেশি কিছু পাওয়া।
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020