সকল প্রকার খাবারের মধ্যে বাদাম অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। পুষ্টির সাথে সাথে এটি অত্যন্ত সুস্বাদুও। বাদাম নিয়মিত খেলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে যায়। গবেষণায় জানা গেছে এই বাদাম খাওয়ার ফলে অনেক রোগ মুক্তির সাথে সাথে ব্রেনে পুষ্টি জোগায়, যার ফলে যেসকল মানুষ মনে রাখতে পারে না। তাদের মনে রাখতে সাহায্য করে। বাদামে প্রচুর আঁশ ও পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী উপাদানও রয়েছে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, দৈনিক ১০ গ্রাম করে বাদাম গ্রহণ করলে মৃত্যুর জন্য দায়ী কয়েকটি বড় ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বাদামের পুষ্টিগুণ দেওয়া হলো চলুন জেনে নেই।
চিনাবাদাম (Peanut)
চিনাবাদামে আছে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন-এ, বি, সি। আর এই ভিটামিন আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকার।
উপকারিতা
১) প্রোটিনের সম্পূর্ণ উৎস। ভোরবেলা খালি পেটে বাদাম খেলে এনার্জি পাওয়া যায়।
২) নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে বাদাম খেলে হার্ট ভালো থাকে।
৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৪) বয়সের সাথে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারানোয় স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। চিনাবাদামকে বলা হয় মস্তিষ্কের খাবার।
৫) চিনাবাদাম আমাদের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
৬) চিনাবাদাম রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ করোনায় ভাল থাকতে চা
আখরোট(Walnut)
আখরোট বাদাম আমাদের দেশে পাওয়া যায় কম। এই বাদামটি দেহের হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ভিটামিন বিদ্যমান।
উপকারিতা
১) হাড় শক্ত করে।
২) ব্রেনে পুষ্টি জোগায়।
পেস্তা বাদাম(Pistachio Nuts)
পেস্তাবাদাম রান্নার কাজে বেশি ব্যবহার করা হয়। খাবারের মধ্যে দিলে খাবার মজাদার হয়। এছাড়া রক্ত শুদ্ধ করতে অনেক কাজ করে। এতে আছে ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন।
উপকারিতা
১) রক্ত শুদ্ধ করে।
২) লিভার ও কিডনি ভালো রাখে।
কাজু বাদাম(Cashew Nuts)
কাজু বাদাম খেতে অনেক মুখরোচক হয়। কাজু বাদামের মধ্যে আছে আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম। আরও আছে ভিটামিন-এ যার ফলে অ্যানিমিয়া ভালো হয়, ত্বক উজ্জ্বল করেতেও সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে থাকে। কিডনি বা শিমের বীচির আকৃতির কাজু বাদামের প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে অনেক। উপকারিতাগুলো সম্পর্কেই জেনে নেই চলুন।
উপকারিতা
১) হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে
কাজু বাদামে ভালো ফ্যাট থাকে এবং এতে কোন কোলেস্টেরল থাকেনা। খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে কাজু বাদাম। অনেকেই মনে করে থাকে চর্বি গ্রহণ বাদ দেয়াটা শরীরের জন্য ভালো, কিন্তু এই কথাটি আসলে সত্যি নয়। সুস্থ দেহের জন্য খাদ্যের সকল ধরণের গুরুপ থেকেই এমনকি ফ্যাট থেকেও পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন। ভালো উৎস থেকে তা গ্রহণ করতে হবে যেমন- কাজু বাদাম। তাছাড়া কাজুতে অলেইক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য অনেক উপকারি।
২) শক্তিশালী হতে সাহায্য করে
কাজু বাদাম ম্যাগনেসিয়ামে সমৃদ্ধ যা শক্ত হাড়ের জন্য, মাংসপেশী ও স্নায়ুর সঠিক কাজের জন্য প্রয়োজনীয়। আমাদের শরীরে দৈনিক ৩০০-৭৫০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন হাড়ের মধ্যে ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য। আর কাজুবাদামে ম্যাগনেসিয়াম ভরপুর থাকে। তাই বেশি করে কাজুবাদাম খাওয়া উচিত।
৩) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
কাজুবাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বিদ্যমান থাকে। সাথে পটাসিয়াম প্রচুর থাকে। কিন্তু এই বাদামটিতে সোডিয়াম কম থাকে। পটাসিয়াম বেশি থাকাই রক্তচাপ নিয়ন্তনে অনেক সাহায্য করে । যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাইলে প্রচুর কাজুবাদাম খাওয়ার প্রয়োজন।
৪) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
কাজু বাদামে সেলেনিয়াম থাকে এবং ভিটামিন ই থাকে। যা ফ্রি যাডিকেলের জারণ প্রতিরোধ করে। যার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কাজুতে প্রচুর জিংক থাকে বলে ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেও সাহায্য করে থাকে।
৫) শরীরের বিভিন্ন কাজের প্রধান ভূমিকা পালন করে
কাজুবাদামে আরো থাকে উচ্চমাএায় কপার। তাই যেহেতু কাজুতে উচ্চমাত্রার কপার থাকে তাই এনজাইমের কাজে, হরমোনের উৎপাদনে এবং মস্তিস্কের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও লাল রক্ত কণিকার উৎপাদনেও সাহায্য করে বলে অ্যানেমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।
যেহেতু কাজুতে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি থাকে তাই দৈনিক ৫-১০ টা কাজু বাদাম খাওয়াই যথেষ্ট। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে এবং মাইগ্রেনের সমস্যা হয় যাদের তাদের না খাওয়াই ভালো। বিভিন্ন ধরণের কাজু বাদাম পাওয়া যায় যেমন- লবণাক্ত, সিদ্ধ বা মশলাযুক্ত। হাইপারটেনশনের রোগীদের সল্টেড কাজু না খাওয়া ভালো।
কাঠ বাদাম(Almonds)
কাঠবাদাম অত্যন্ত পরিচিত ও সস্তা ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘বি’, ‘ই’, ‘ডি’ এবং উপকারী ফ্যাট। গুণাগুণ দিক থেকে বিবেচনা করে দেখলে এটিকে বলা হয় সুপার ফুড। কাঠবাদামের ভিটামিন ‘বি’ মস্তিষ্কের কোষ উন্নত এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। প্রতিদিন কাঠবাদাম খেলে বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি অনেক বেশি প্রখর হবে। পানিতে ভিজিয়ে কাঠ বাদাম খোসা ছুলে খেতে হবে। তবে অবশ্যই এটি তেলে ভাজা ও লবণমুক্ত হতে হবে। এর ফাইটোস্টেরল ও মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ক্ষতিকর কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে। কাঁচা কাঠবাদাম প্রোটিন এবং ফাইবার ক্ষুধা কমাতেও সাহায্য করে। এর ফলে সহজে দেহের ওজন কমে। এছাড়া কাঠবাদামে থাকা উপাদান শরীরকে চর্বি শোষণ করতে দেয় না। এর ফলে এ চর্বি বের হয়ে যায়। কাঠবাদামের ভিটামিন ‘ডি’ ও ম্যাগনেসিয়াম চুল পড়া রোধ এবং মাথার ত্বক উন্নত করতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন ‘ই’ ত্বকের রুক্ষতা-শুষ্কতা দূর করতে বেশ উপকারী। কাঠবাদামের রস ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ, সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়।
বাদাম নিয়ে একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকেই ভাবেন, বাদাম শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। কিন্তু এ ধারণাটি পুরো সত্য নয়। বরং বিভিন্ন গবেষণায় বলা হচ্ছে, বাদাম শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে। এমনকি ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি কমাতেও ভূমিকা রাখে।
বলা হচ্ছে, অলিভ অয়েলের চেয়ে বাদাম দ্রুত ওজন হ্রাসে সাহায্য করে। সকালের নাশতায় একটুখানি বাদাম রাখতে পারেন। কারণ বাদাম খেলে অল্পতেই পেট ভরে গেছে অনুভূতি হয়। এ অনুভূতির ফলে খাবার কম খাওয়া হয়, যা ওজন কমাতে সহায়তা করে। বাদামে অতিরিক্ত ফ্যাট থাকার কারণে ভয়ে অনেকে বাদাম খেতে চান না। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, বাদামে থাকা ফ্যাট আমাদের শরীর পুরো গ্রহণ করতে পারে না। এ কারণে বাদাম খেলে ওজন বৃদ্ধির কোনো ভয় থাকে না।কাজেই যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন, তারা তাদের খাদ্য তালিকায় আজ থেকে বাদাম যুক্ত করতে পারেন। কেমোথেরাপি চলাকালে আমন্ড মিল্ক খেলে ইমিউনিটি সিস্টেমের উন্নতি ঘটে। কাঠবাদাম অন্ত্রের জন্য উপকারী— এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে ২০০৮ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে।
ম্যাকাডামিয়া নামে অস্ট্রেলিয়ান এক প্রকার বাদামে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি। এ বাদাম হূদযন্ত্রের জন্য উপকারী। বড় ধরনের গাছে এটি ধরে। পেকে ঝরে পড়লে কৃষকরা সেখান থেকেই বাদাম সংগ্রহ করেন। এ বাদাম থেকে তেল তৈরি হয়। ব্রাজিলিয়ান বাদামে রয়েছে সেলেনিয়াম নামের এক প্রকার খনিজ, যা প্রোস্টেট ক্যান্সার মোকাবেলায় কাজ করে।
সমাপনীতে বলা যায়,বাদামের পুষ্টিগুণ খুব দারুণ। এতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ, ভিটামিন, শর্করা জাতীয় খাদ্য উপাদান রয়েছে। সাধারণত বাদাম ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং হার্টের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।এছাড়া; বাদাম চুল এবং ত্বকের দারুণ উপকার করে ।
আরও পড়ুনঃ স্পিরুলিনার ১১ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021