পিঁয়াজ বা পেঁয়াজ হল অ্যালিয়াম গোত্রের সকল উদ্ভিদ। সাধারণ পিঁয়াজ বলতে অ্যালিয়াম কেপা কে (Allium cepa ) বোঝায়। মানবসভ্যতার ইতিহাসের আদিযুগ থেকেই পিঁয়াজের ব্যবহার শুরু হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব খানের সমাজেই বিভিন্ন রান্নায় পিঁয়াজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বর্তমানে কাচা, জমানো, আচার , চূর্ণ, কুঁচি, ভাজা, এবং শুকনো করা পিঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। শুধু পিঁয়াজ সাধারণত সরাসরি খাওয়া হয়না, বরং পিঁয়াজ কুঁচি বা ফালি করে কাচা অবস্থায় সালাদে, অথবা রান্নাতে উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পিঁয়াজ বিভিন্ন রকমের হতে পারে – ঝাঁঝালো, মিষ্টি, তিতা।
পিঁয়াজকে ভিনেগার বা সিরকাতে ডুবিয়ে আচার বানানো হয়। দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্যে পিঁয়াজ একটি মৌলিক উপকরণ, এবং প্রায় সব রান্নাতেই পিঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। পিঁয়াজের কোষের আকার বেশ বড় বলে বিজ্ঞান শিক্ষায় মাইক্রোস্কোপের ব্যবহার ও কোষের গড়ন শেখাতে পিঁয়াজের কোষ ব্যবহার করা হয়।
পেঁয়াজের গলা ও কন্দ পচা রোগ
লক্ষণ
প্রথম দিকে পেঁয়াজের পাতা হালকা সবুজ হতে হলুদ রং ধারণ করে এবং আগা থেকে পাতা শুকাতে থাকে। এক সময় গোড়ায় পানি ভেজা পঁচন দেখা যায় এবং অনেক সময় গাছ গোড়ায় ভেঙ্গে যায় ।
ব্যবস্থাপনা
- আক্রান্ত পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করা ।
- রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি/ রোভরাল মিশিয়ে ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর ২ বার স্প্রে করা।
প্রতিরোধ
১. একই ক্ষেতে বার বার পেঁয়াজের চাষ করবেন না।
২. এক ক্ষেতের পানি দিয়ে আরেক ক্ষেতে প্লাবন সেচ দিবেন না।
৩. সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
৪. সুষম সার ব্যবহার করা।
৫. প্রোভেক্স বা হোমাই বা বেনলেট ১% দ্বারা বীজ শোধন করা।
পেঁয়াজের পার্পল ব্লচ রোগ
পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি অন্যতম মসলা জাতীয় ফসল। আর পেঁয়াজ এর রোগ ও পোকামাকড়ের মধ্যে পার্পল ব্লচ রোগ সবচাইতে মারাত্মক। এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ।Alternaria porri নামক ছত্রাকের কারণে এই রোগ হয়। এই রোগের জীবানু বায়ু ও বৃষ্টির পানির মাধ্যেমে বিস্তার লাভ করে এবং এরা শস্য অবশিষ্টাংশ ও মাটিতে এক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
আরও পরতে পারেনঃ ধুন্দলের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১
লক্ষণ
- প্রথমে পাতা ও বীজবাহী কান্ডে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি ভেজা বাদামী বা হলুদ রং এর দাগের সৃষ্টি হয়।
- দাগগুলি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে বড় দাগে পরিনত হয়।
- দাগের মধ্যবর্তী অংশ প্রথমে লালচে বাদামী ও পরবর্তীতে কালো বর্ণ ধারণ করে এবং দাগের কিনারা বেগুনী বর্ণ ধারণ করে।
- আক্রান্ত পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে ও শুকিয়ে যা…
- বীজবাহী কান্ডের গোড়ায় আক্রান্ত স্থানের দাগ বৃদ্ধি পেয়ে হঠাৎ ভেংগে পড়ে।
- এ রোগের আক্রমনের ফলে বীজ অপুষ্ট হয় এবং ফলন হ্রাস পায়।
- রোগ মারাত্মক আকার ধারন করলে সুস্থ বীজ উৎপাদন সম্ভবপর হয় না।
ব্যবস্থাপনা
- আক্রান্ত পাতা ও বীজকান্ড ছাটাই করে ধ্বংস করা।
- সুষম সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা করা ।
- প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাক নাশক যেমন: টিল্ট ১০ লি. পানিতে ৫ মি.লি. মিশিয়ে ১২ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করা।
- আদ্র ও উষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করলে রুটিন স্প্রে ছাড়াও ঘন ঘন স্প্রে করতে হবে।
- রোভরাল, ডাইথেন এম ৪৫, রিডোমিল গোল্ড এমজেড ইত্যাদি পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায় ।
করণীয়
১. অতি ঘন করে পেঁয়াজ চাষ করা যাবে না।
২. একই জমিতে বার বার পেঁয়াজ চাষ করা যাবে না।
৪. ক্ষেত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
৫. জমিতে কয়েকবার পেঁয়াজ ছাড়া অন্য ফসল চাষ করে আবার পেঁয়াজ চাষ করতে হবে।
পেঁয়াজের চারার গোড়া পচা রোগ
লক্ষণ
ছত্রাকের আক্রমণে ডাটাশাকের চারার গোড়া পঁচে যায়। চারা নেতিয়ে পড়ে ।
ব্যবস্থাপনাঃ
- বেডে চারা উৎপাদন করা ।
- পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা করা।
- শতাংশ প্রতি ৭- ১০ কেজি ট্রাইকো- কম্পোস্ট ব্যবহার করা।
পেঁয়াজের কাটুই পোকা
লক্ষন
- এ পোকা রাতের বেলা চারা মাটি বরারবর গাছ কেটে দেয়।
- সকাল বেলা চারা মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায় ।
পেঁয়াজের বাল্ব পচা রোগ
ব্যবস্থাপনা
- সকাল বেলা কেটে ফেলা চারার আশে পাশে মাটি খুরে পোকা বের করে মেরে ফেলা ।
- কেরোসিন মিশ্রিত পানি সেচ দেয়া।
- পাখি বসার জন্য ক্ষেতে ডালপালা পুতে দেয়া।
- রাতে ক্ষেতে মাঝে মাঝে আবর্জনা জড়ো করে রাখলে তার নিচে কীড়া এসে জমা হবে, সকালে সেগুলোকে মেরে ফেলা।
- বাইপোলার ৫০ ইসি বা সার্টার ৫০ ইসি ১.৫ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকেলে স্প্রে করা।
সাবধানতা
দু একটি চারা কাটতে দেখলে মোটেও অবহেলা করা যাবে না।
করনীয়
১. উত্তমরুপে জমি চাষ দিয়ে পোকা পাখিদের খাবার সুযোগ করে দিতেহবে।
২. চারা লাগানোর প্রতিদিন সকালে ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ মরিচের পাতা কুঁকড়ে যাওয়া রোগ প্রতিরোধে করণীয় – প্রথম পর্ব
পেঁয়াজের কন্দ ফেটে যাওয়া সমস্যা
লক্ষণ
- স্কেরোসিয়াম রফসি দ্বারা আক্রান্ত গাছ হাত দিয়ে টান দিলে খুব সহজেই মাটি থেকে পেঁয়াজসহ উঠে আসে।
- আক্রান্ত স্থানে পচন ধরে ও সরিষার দানার মত বাদামী বর্ণের গোলাকার স্কেরোসিয়া দেখা যায়।
- ফিউজারিয়াম দ্বারা আক্রান্ত গাছের পাতা হলদে হয়ে যায় ও ঢলে পড়ে। হাত দিয়ে টান দিলে সহজেই মাটি থেকে উঠে আসে না।
- উভয় জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত কান্ডে পচন ধরে এবং আক্রান্ত পিঁয়াজ গুদামজাত করা হলে সংরক্ষিত পিঁয়াজের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে।
ব্যবস্থাপনা
- সুস্থ, নীরোগ বীজ ও চারা ব্যবহার করতে হবে।
- বীজ উপকারী ছত্রাক ট্রাইকোডারমা দ্বারা শোধন করে বপন করতে হবে।
- প্রোভেক্স-২০০ বা ব্যভিষ্টিন প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ কন্দ শোধন করে বপন করতে হবে।
- মাটির উপযুক্ত আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে ও পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- আক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ তুলে ধবংস করে ফেলতে হবে।
- আক্রান্ত জমিতে শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
- জমিতে রোগ দেখা দিলে ব্যভিষ্টিন অথবা প্রোভেক্স প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছের গোড়ায় মাটিতে স্পে করতে হবে।
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021