দুর্বা
আউশ ধান, পাট, আখ, ভূট্টা প্রভৃতি ক্ষেতে মাটিতে শায়িত অবস্থায় পাওয়া ঘাসটিই অতি পরিচিত দুর্বা ঘাস। স্থায়ী জলাবদ্ধ স্থানে দুর্বা ঘাস টিকে থাকতে পারে না। এর কান্ড সবুজ রঙের হয়ে থাকে, মাঝে মাঝে লালচেও হতে পারে। এর কান্ড প্রায় ৫ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা, মসৃণ ও গোলাকার হয়ে থাকে। পুষ্পবিন্যাসযুক্ত কান্ড খাড়া অবস্থায় থাকে। পুষ্পছড়াগুলো বোঁটার উপর থেকে চারিদিকে আঙ্গুলের মতো ছড়ানো থাকে। এটি বীজ, স্টোলন ও রাইজোমের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। দুর্বাঘাসের মূলবিন্যাস মাটির অগভীরে বিস্তৃত থাকে। কিছুটা গভীরে চাষ দিয়ে এ ঘাসের রাইজোম মাটির উপরিভাগে এনে সূর্যের তাপে সেগুলোকে শুকিয়ে ধ্বংস করা যায়।
চেনার উপায়
দুর্বার পাতার লিগিউল সাদা রঙের পাতলা লোমে আবৃত যা কাণ্ডকে আটকে ধরে রাখে। কীলকমঞ্জরির যে অংশে গ্লুম রয়েছে সে প্রান্তে ছোট ছোট কাটার মতো লোমযুক্ত থাকে। পাতা-পল্লব সবই ধূসর সবুজ রঙের। আগাছা নিয়ে পড়ুন দ্বিতীয় পর্বটি।
দুর্বা ঘাসের উপকারিতা
ক) দুর্বা ঘাস শরীরের রেচনতন্ত্রের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনে। প্রসাবে কষ্ট হলে দুর্বা ঘাসের রস দুধ ও পানি মিশিয়ে খেলে ভাল ফল দেয়।
খ) দুর্বা ঘাস অতি পরিচিত প্রাকৃতিক এন্টিসেপটিক। শরীরের কোনো স্থান কেটে গেলে দুর্বা ঘাসের শিকড় পিষে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
গ) সন্তান না হলে দুর্বা ও আতপ চাল এক সাথে বেটে বড়া করে ভাতের সাথে সপ্তাহে তিন/চারদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়। (ভেরিফাইড তথ্য নয়)
ঘ) আয়ুর্বেদীয় মতে রক্ত পিত্ত হলে এ’রোগে মুখ, নাক ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে রক্ত বের হতে পারে। দুর্বা ঘাসের রসের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে খেলে এই রোগের উপশম হয়।
ঙ) আমাশয় হলে দূর্বা ঘাসের রস ডালিম পাতা কিংবা ডালিমের ছালের রস ৪ থেকে ৫ চামচ মিশিয়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ বার খেলে ১০ থেকে ১৫ দিন খেলে আমাশয় ভালো হয়ে যাবে।
চ) বমি বমি ভাব বন্ধের জন্য দূর্বা ঘাসের রস ২ থেকে ৩ চামচ ১ চা চামচ চিনি বা গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে ১ ঘণ্টা পর পর খেলে খুব দ্রুতই কেটে যাবে।
সবুজ শিয়াল লেজা
সবুজ শিয়াললেজা খরিফ ঋতুর আগাছা। দানাজাতীয় ফসলে এদের দেখা যায় সাধারণত। তবে আউশ ধানে বেশি ক্ষতি করে। এর ফুল ও ফল আউশ ধানের সাথেই পরিপক্ক হয়।
এ আগাছার গোড়া থেকে একসাথে অনেকগুলো কুশি উৎপন্ন হয়। কান্ড খাড়া, প্রায় ১০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতার গোড়ার দিকে কিছুটা চওড়া এবং আগাড় দিকে ক্রমশ সরু ও চোখা। পাতার আবারণ ঢিলা, মসৃণ ও কিনারাগুলোতে ছোট কাটার মতো গঠন রয়েছে। পুষ্পবিন্যাস দেখতে শিয়ালের লেজের মতো। পুষ্পবিন্যাসের গঠন অগ্রভাগে কিছুটা সরু। এ আগাছার চারাগুলো দেখতে ধানের মতোই। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার ঘটায়।
চেনার উপায়
ছোট অবস্থায় চেনা যায় না। বয়েস হলে পুষ্পবিন্যাস দেখেই চেনা যায়। কেননা এর পুষ্পবিন্যাসের গঠন শেয়ালের লেজের মতোন। পরিপক্ক অবস্থায় সবুজ হয় বলেই একে সবুজ শেয়াললেজা বলা হয়।
পেনিকাম ঘাস
এ আগাছা আখ ও ভুট্টা ক্ষেতেই বেশি চোখে পড়ে। তবে ধান ক্ষেতেও জন্মাতে দেখা যায়। এর উচ্চতা প্রায় ২ থেকে ৩ মিটার। এটি গুচ্ছমূলের সাহায্যে অথবা কখনো কখনো ছোট আকারের রাইজোমের সাহায্যে মূল উৎপাদন করে বিস্তৃতি লাভ করে। কান্ড খাড়া, দৃঢ়, কখনো কখনো মোটা হয়, মসৃণ ও সামান্য লোমশ প্রকৃতির। কান্ডের গোড়া ১ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধবিশিষ্ট। লিগ্যুল ১ থেকে ৩ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা। পত্রফলক রৈখিক, সূচাগ্র এবং প্রায় ১৫ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ১ থেকে ৩.৫ সেন্টিমিটার চওড়া হয়ন এরা সবুজ বা হালকা বেগুনী রঙের হয়ে থাকে।
চেনার উপায়
এ আগাছার পর্বসন্ধি ও লিগ্যুল লোমশ। ছড়ানো ধরণের পুষ্পছড়া এবং উপরের দিকের লেমা কুচকানো থাকে।
নলখাগড়া
নলখাগড়া নাম শুনেনি এমন মানুষ খুবই কম পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের সিলেটের জলাভূমিতে এ আগাছা খুব বেশি পরিমাণ জন্মাতে দেখা যায়। এটি জলজ ও আধাজলজ, বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর কান্ড ২-৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। কান্ড বেশ শক্ত, দৃঢ়, ভিতরে ফাঁপা ও খাড়া ধরণের। পাতার গোড়া চওড়া ও আগার দিকে ক্রমশ সরু, দেখতে বর্শার ফলার মতোন। পাতা বেশ বড় হয় প্রায় ২৫-৩৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১০ থেকে ১৫ মিলিমিটার পর্যন্ত চওড়া হয়। মুথা ঘাস, আঙুলী ঘাস ও শ্যামা সম্বন্ধে জানুন প্রথম পর্বে।
মসৃণ পত্রফলকের কিনারা খসখসে হয়ে থাকে। পত্রাবরক একটি অন্যটিকে ঢেকে রাখে অনেকটা চামড়ার মতোন। আদা অথবা বেগুনি রঙের অনেক ফুলবিশিষ্ট, খাড়া, শাখায়ত ও ছড়ানো পুষ্পছড়া প্রায় ২০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার লম্বা। এ আগাছা অঙ্গজ উপায়ে বংশবিস্তার করে।
চেনার উপায়
এ আগাছা দেখতে আখ গাছের মতো লম্বা ধরণের, তবে কান্ডের ভিতরে ফাঁপা। পুষ্পছড়া অনেক বড় আকারের, সাদা রঙের এবং পালকের মতো যা দেখে সহজেই এটি চেনা সম্ভব।
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020