পালং শাক বা Spinach এমারান্থাসি পরিবারভুক্ত এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি জনপ্রিয় শাক ও সবজি। এর আদিবাস মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া। এটি একবর্ষজীবি উদ্ভিদ, তবে দ্বিবর্ষজীবি পালং গাছ হতে পারে যদিও বিরল। পালং গাছ ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। বাংলাদেশে শীতকালে এর চাষ হয়। গাছের গোড়ার দিকের পাতাগুলো বড় বড় এবং উপরের দিকের পাতাগুলো ছোট।
পালং শাকের অসাধারণ কিছু উপকারিতা
ক) পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ এবং বিটা কেরোটিন থাকায় তা কোলনের কোষগুলোকে রক্ষা করে।
খ) বাতের ব্যথা, অস্টিওপোরোসিস, মাইগ্রেশন, মাথাব্যথা দূর করতে প্রদাহনাশক হিসেবে পালং শাক কাজ করে।
গ) পালং শাক স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর।
ঘ) পালং শাকে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন ‘সি’ থাকায় রক্তস্বল্পতা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ঙ) পালং শাক পেট পরিষ্কার রাখতে অপরিহার্য। তাছাড়া রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে, দৃষ্টিশক্তিও বাড়ায়।
চ) কিডনিতে পাথর থাকলে, তা গুড়ো করতে সাহায্য করে। দেহ ঠাণ্ডা ও স্নিগ্ধ রাখে পালং শাক।
ছ) অনেকের মেদবৃদ্ধি ও দুর্বলতায় হাঁফ ধরে, তারা পালং পাতার রস খেলে উপকার পাবেন। পালং শাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
জ) পালং শাকে ১৩ প্রকার ফাভোনয়েডস আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকর।
ঝ) পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস থাকায় এটি মাসিকজনিত সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
ঞ) পালং শাক দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পালং শাক খুব উপকারী।
পালং শাকের জাত
আমাদের দেশে বেশ কয়েক জাতের পালং শাকের জাত রয়েছে। এর মধ্যে-পুষা জয়ন্তী, কপি পালং, গ্রিন, সবুজ বাংলা ও টকপালং। এ ছাড়া আছে নবেল জায়েন্ট, ব্যানার্জি জায়েন্ট, পুষ্প জ্যোতি ইত্যাদি অন্যতম।
পালং শাক চাষের মাটি
পালংশাক চাষের জন্য দো-আঁশ এবং এঁটেল মাটি উপযোগী।
পালং শাকের বীজ বপনের সময়
ভাদ্র-আশ্বিন মাসের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে। জমি তৈরি ও বীজ বপন পালং শাক চাষ করার আগে চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে তৈরি করে নিতে হবে। পালং শাকের বীজ জমিতে ছিটিয়ে ও সারিতে রোপণ করা যায়। তবে সারিতে বপন করা সুবিধাজনক। পালং শাকের সেচ ও নিষ্কাশন জমিতে রস কম থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। জমিতে পানি যাতে না জমে সেজন্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পরিচর্যা
ক) নিড়ানির সাহায্যে জমির ঘাস সময়মত বাছাই করতে হবে।
খ) মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে।
গ) বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পর গাছ উঠিয়ে পাতলা করে দিতে হবে। উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রায় ২.৫-৩.০ মেট্রিক টন পালং শাক পাওয়া সম্ভব।
পালং শাক চাষে সার ব্যবস্থাপনা
সারের নাম | সারের পরিমাণ (শতকের জন্য) |
পচা গোবর/কম্পোস্ট | ৪০ কেজি |
টিএসপি | ১.০ কেজি |
ইউরিয়া | ৫০০ গ্রাম |
এমওপি/পটাশ | ৫০০ গ্রাম |
প্রয়োগ পদ্ধতি
ক) ইউরিয়া বাদে বাকি সব সার জমির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। গোবর বা কম্পোস্ট সার জমি তৈরির শুরুতেই প্রয়োগ করা শ্রেয়।
খ) চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পর পর ইউরিয়া সার ২-৩ টি আলাদা ডোজে মাটিতে উপরি প্রয়োগের মাধ্যমে মিশিয়ে দিতে হবে।
পালং শাক সংগ্রহ
বীজ বপনের এক মাস পর থেকে পালংশাক সংগ্রহ করা যায় এবং গাছে ফুল না আসা পর্যন্ত যে কোনো সময় সংগ্রহ করা যায়।
আরও পড়ুনঃ ছাদবাগানে নাগপুরী কমলার চাষ
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021