Table of Contents
ইট-কাঠ-পাথরের এই বদ্ধ শহরে একটুকু প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধান পেতে গাছের বিকল্প নেই। যান্ত্রিক এ জীবনে প্রকৃতির পরশ পেতে অন্দরসজ্জায় ব্যবহৃত হয় নানা ধরনের বাহারি মানিপ্ল্যান্ট কিংবা পাতাবাহার।
আপাত নিরীহ এই প্রানের প্রতিচ্ছবি গাছগুলোই অনেকক্ষেত্রে হতে পারে আমাদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। বিশেষত, বাড়ির ছোট শিশু কিংবা পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু ইনডোর প্লান্টস হতে পারে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ হুমকি।
উদ্ভিদবিদদের মতে, অন্দরসজ্জায় ব্যবহৃত পাতাবাহারের মধ্যে এমন অনেক গাছ আছে যা বেশ বিষাক্ত। আর এই বিষাক্ত উদ্ভিদগুলোর সংস্পর্শ মানুষ সহ বিভিন্ন প্রাণীর জন্য বেশ হুমকিজনক। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে এই গাছগুলো।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, বিশেষ কিছু বিষাক্ত ইনডোর প্লান্টস সম্পর্কে যারা কিনা মানুষের মৃত্যুর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ কারণ-
1 অ্যারোহেড
উজ্জ্বল সবুজ রং আর হৃদয় আকৃতির পাতার জন্য অন্দরসজ্জায় অ্যারোহেড প্রকৃতিপ্রেমীদের অন্যতম পছন্দ। কচি অ্যারোহেড গাছের হৃদয় আকৃতির পাতার গাঢ় সবুজ রং বয়স বাড়ার সাথে সাথে কালচে সবুজ রঙ ধারণ করতে শুরু করে। আর সেই সঙ্গে হৃদয় আকৃতি পাতার অগ্রভাগ তীরের মাথার আকার ধারণ করতে থাকে।
অন্দরসজ্জার অন্যতম অনুষঙ্গ এই অ্যারোহেড গাছের ক্ষতিকারক দিক অনেকটা ফিলোডেনড্রন লতার মতোই। অ্যারোহেড এর সংস্পর্শে থাকলে শিশু ও পোষা প্রাণীর গলাব্যাথা, মাথাব্যথা, পেটেব্যথা ও বমিভাবও দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে শ্বসনতন্ত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। তবে কেবলই যে, শিশু কিংবা পোষা প্রাণী এই গাছের দ্বারা আক্রান্ত হয় তেমনটি নয়। দীর্ঘদিন বিষাক্ত এই গাছের সংস্পর্শে থাকলে বৃদ্ধরাও বিভিন্ন জটিলতায় ভুগতে পারেন বলে ধারণা করেন উদ্ভিদবিদেরা।
2 ফিলোডেনড্রন
দক্ষিণ আমেরিকার ফিলোডেনড্রন নামের এই অতি পরিচিত পাতাবাহারটির নাম আমাদের অনেকেরই অজানা। সাধারণ মানিপ্লান্ট কিংবা পাতাবাহার হিসেবে পরিচিত আপাতনিরীহ এই গাছটির সংস্পর্শে থাকলে তৈরি হতে পারে নানা স্বাস্থ্য জটিলতা।
সুইডেনের ইনস্টিটিউট অফ হেলথের অণুজীব রোগতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক ফিলিপ রস জানিয়েছেন, বিরল এক ব্যাকটেরিয়ার কারণে ফিলোডেনড্রন নামক গাছের সংস্পর্শে এলে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এছাড়াও গলাব্যথা, মাথাব্যথা ও অনিদ্রাসহ স্নায়ুতন্ত্র ও শ্বসনতন্ত্রের বেশ কিছু সমস্যাও পরিলক্ষিত হয়।
তবে এর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিকটি হল, গাছটির প্রভাব ও তার ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো খুব দ্রুত বোঝার সাধ্য আমাদের নেই অত্যন্ত ধীরে ধীরে গাছটি মানুষ ও পোষা প্রাণীকে আক্রান্ত করে বলে জানা যায়।
3 ডিফেনবাকিয়া
অন্দরসজ্জায় ডিফেনবাকিয়া ঘরের অন্যতম সৌন্দর্যবর্ধক অনুষঙ্গ হলেও এর ভয়াবহতা অনেকেই কল্পনা করতে পারবেন না।
হাফিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিফেনবাকিয়ার কেবলমাত্র একটি পাতা আপনাকে অসুস্থ করার ক্ষমতা রাখে, এমনকি এই গাছের একটি পাতা আপনার মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে, এই গাছের পাতায় থাকে ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামের এক উপাদান, যা মানুষের কিংবা পোষা প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। যুক্তরাজ্যের অধিবাসী তিন বছর বয়স্ক এক মেয়ে শিশু
ডিফেনবাকিয়া গাছের পাতা গিলে ফেলে। এতে তার জিহ্বা ফুলে যায় এবং মৃত্যু ঘটে। সাধারনত এই গাছের যেকোনো অংশ খাওয়ার পর বা গলায় যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে একটি শিশুর মৃত্যু হতে পারে, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রেও ১৫ মিনিটের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রবল।
4 ক্যালাডিয়াম
লাল, গোলাপি অথবা সাদা পাতার ক্যালাডিয়াম নামে পরিচিত নান্দনিক এ পাতাবাহার গাছটি বাগান ও অন্দরসজ্জায় বহুল ব্যবহৃত। তবে দক্ষিণ আমেরিকার নান্দনিক এ পাতাবাহার সম্পর্কে উদ্ভিদবিদরা জানিয়েছেন এক ভয়ঙ্কর তথ্য। ক্যালাডিয়াম গাছটির পাতায় রয়েছে এক দীর্ঘস্থায়ী বিষ যা শিশু কিংবা পোষা প্রাণীদের মুখে গেলে তারা আক্রান্ত হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী পেটের পীড়ায়। শুধু তাই নয়, এক পরীক্ষায় জানা গেছে, দীর্ঘদিন ক্যালাডিয়ামের সংস্পর্শে থাকলে এক ধরনের স্থায়ী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয় যার ফলে মুখ, জিহ্বা ও ঠোঁটে জ্বালাপোড়া, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্টসহ বেশ কিছু মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
5 স্নেক প্ল্যান্ট
ইতালি ও স্পেনে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে সমাদৃত এই ঝোপালো গুল্মটি মোটেই স্বাস্থ্যগতভাবে শিশু কিংবা পোষা প্রাণীদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে না। অন্যান্য পাতাবাহার গাছের তুলনায় অনেকটাই কম বিষাক্ত হলেও স্নেক প্লান্টের পাতা খেলে অথবা দীর্ঘদিন তার সংস্পর্শে থাকলে গলাব্যথা ও মাথাব্যাথাসহ শ্বসনতন্ত্রের বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। মৃত্যুর আশংকা না থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই গাছটি আবার দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়সহ অন্যান্য পেটের পীড়ার কারণ হয়েও দেখা দেয়।
6 মানিপ্ল্যান্ট (Pothos):
ফিলোডেনড্রনের প্রজাতি ভেবে ভুল করা এই মানিপ্লান্ট গাছের পাতার দ্বারা মূলত ফিলোডেনড্রন, ক্যালাডিয়াম, ডিফেনবাকিয়া উদ্ভিদের ন্যায় স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘদিন মানিপ্ল্যান্টের সংস্পর্শে থাকলে কিংবা পাতা মুখে দিলে শিশু ও বাড়ির পোষা প্রাণীদের ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, পেটেব্যথা, বমি বমি ভাব এবং অনিদ্রাসহ বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
7 ইংলিশ আইভি ( English Ivy):
অন্দরসজ্জায় বহু সমাদৃত নান্দনিক এই উদ্ভিদের পাতা যদি ভুলক্রমে শিশু কিংবা বড়রা খেয়ে ফেলে সেক্ষেত্রে তার শরীরে চুলকানি, ত্বক ফুলে যাওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া, জ্বর হওয়া এবং হ্যালুসিনেশনও হতে পারে।
পরবর্তী পর্ব পড়তেঃ অসতর্কতায় আপনার ক্ষতির কারণ হতে পারে যেসব ইনডোর প্ল্যান্টস – পর্ব ২
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021