যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। যিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আযহা পালিত হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী এ বছর জুন মাসের ২৯ তারিখ বাংলাদেশের মানুষ ঈদুল আযহা উদযাপন করবেন। ঈদুল আযহার অন্যতম একটি আনুষ্ঠানিকতা হলো পছন্দের পশুকে কোরবানি করা।
মুসলিমদের এই উৎসবে সামর্থ্যবানরা পছন্দমতো পশু কোরবানি দিয়ে আল্লাহর কাছে তার তাকওয়া প্রদর্শন করে। সামর্থ্যবানদের কোরবানি গরুর মাংসের একটি অংশ থাকে গরিবদের জন্যে। সকল মুসলিমরা একইদিনে ভাগাভাগি করে গোশত খায়। এই কোরবানির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল সুস্থ ও সবল পশু নির্বাচন করা।
সারাদেশে ১ কোটিরও বেশি পশু কোরবানিতে জবেহ করা হয়। সবাই ভাল গরুটিই পছন্দ করতে চায়, এজন্যে সবার নজর থাকে গরুর স্বাস্থ্যের প্রতি। এই উৎসবকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা খুব দ্রুত গরু মোটাতাজাকরণের দিকে ঝুঁকছে। এতো খুব অল্প সময়ে কামিয়ে নেওয়া সম্ভব অধিক মুনাফা। ক্রেতারা যাতে প্রতারণার শিকার না হয় সেজন্য বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
হরমোনমুক্ত সুস্থ গরু চেনার উপায়
১) হরমোনযুক্ত গরু স্বাস্থ্যবান দেখাবে কিন্তু এরা তেমন চটপটে হবে না। খুব বেশি নাড়াচাড়া করতে দেখা যাবে না।
২) পশুর চোখ উজ্জ্বল ও তুলনামূলক বড় আকৃতির হবে।অবসরে জাবর কাটবে (পান চিবানোর মত)। কান নাড়াবে, লেজ দিয়ে মাছি তাড়াবে। বিরক্ত করলে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সহজেই রেগে যাবে।
৩) গরুর শরীরে চাপ দিয়ে ছেড়ে দিলে যদি চামড়া আগের অবস্থানে সহজে ফিরে না আসে তাহলে বুঝতে হবে এটি স্টেরয়েড খাওয়ানো।
৪) স্টেরয়েড খাওয়ানো গরুর চামড়া চকচকে হবে।
৫) অসুস্থ গরুর নাক ভেজা থাকে না, সুস্থ গরুর থাকে। এছাড়া অসুস্থ গরুর শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে।
৬। গোবর স্বাভাবিক থাকবে, পাতলা পায়খানার মতো হবে না।
৭। সামনে খাবার এগিয়ে ধরলে জিহ্বা দিয়ে তাড়াতাড়ি টেনে নিতে চাইবে। অপরদিকে অসুস্থ পশু ভালোমতো খেতে চাইবে না।
৮। অসুস্থ গরুর উরুতে অতিরিক্ত মাংস থাকবে।
৯। সুস্থ গরুর বুকের পাজরে হাড়া দেখা যায়, অসুস্থ গরুর হাড়া স্বাভাবিকভাবে কখনোই দেখা যায় না তেমন।
১০। গরু ঝিমায়, নিরব থাকে। খুব বেশি আশেপাশের কোলাহলে সাড়া দেয় না।
গরুকে সাধারণত সঠিকভাবে বাড়তে দেওয়া হলে ঘাসের সাথে সাথে খৈল, ভুষি, বিচুলি ও নানারকম দানাদার খাদ্য দিতে হয়। স্বাভাবিকভাবেও গরু মোটাতাজা করা যায়। তবে সেটি ২-৩ মাসের মতো সময় নিয়ে অধিক দুধের জন্যে করা যায়। এর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুযায়ী খড়, মোলাসেস, ইউরিয়া সার ও মসুরি ডাল গবাদি পশু মোটাতাজাকরণের সেইফ পদ্ধতি। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা ঈদের মাসখানে আগে গ্রোথ হরমোন ও স্টেরয়েড রক্তে প্রবেশ করিয়ে গরু মোটাতাজাকরণের অনৈতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। কোথাও কোথাও মাসে ২৫-৩০ টির অধিক ট্যাবলেট, স্থানীয় ভাষায় সাদা ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। এসব গরুর শরীরের কোষসমূহ অধিক পানি শোষণ করে ফুলে যায়। পানির প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে। লেজ দিয়ে মাছিও খুব একটা তাড়াতে দেখা যায় না। খাবারও তুলনামূলকভাবে কম খায়। শরীরে সলিড গোশতের পরিমাণ কম থাকে। হরমোন রক্তের মাধ্যমে শরীরে জমে থাকে। এই হরমোন রান্না করার সময়ও নষ্ট হয় না। যা খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে পাকস্থলী, কিডনি, লিভারকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এছাড়াও ধীরে ধীরে ক্যান্সার তৈরি করে শরীরে।
স্বাস্থ্যবান গরু মানেই সুস্থ গরু না। গরু কেনার সময় গরুর আকৃতির দিকে মনোযোগ না দিয়ে কয়েকটি বিষয় যদি খেয়াল রাখি, তবে খুব সহজেই হরমোনমুক্ত গরু কেনা অসম্ভব না।
আরও পড়ুনঃ ঘাস-খাওয়া বনাম শস্য-খাওয়া গরুর মাংস – পার্থক্য কী?
কোরবানির জন্য দেশে গরু,মহিষ, ছাগল প্রভৃতি পশু বা প্রাণীর চাহিদা ব্যাপক। পূর্বে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও অনেক গশু আমদানি করা হত। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, কোরবানির চাহিদা মোতাবেক দেশে এখন পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু বা প্রাণী রয়েছে। পশু ক্রয় থেকে শুরু করে মাংস ভক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে সর্বক্ষেত্রে। রোগব্যাধির প্রকোপ বেশি হলে প্রাণী চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।
কোরবানির পশু কেনার পর আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষই পশুর প্রতি বেশি দরদ দেখাতে গিয়ে জবাইয়ের পূর্বে বেশি করে খাবার খাওয়ায়, যা বিজ্ঞানসম্মত নয়। এতে করে মাংসের গুণগত মান কমে যেতে পারে৷ পশু জবাইয়ের ১২ ঘন্টা পূর্ব থেকে পশুকে কোনো খাবার না দেওয়াই ভালো এবং বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে৷ এতে করে চামড়া ছাড়ানো সহজ হবে৷
সহযোগিতায়ঃ
ডাঃ আবদুর রহমান (রাফি)
বি. এস. সি. ভেট সায়েন্স এন্ড এ. এইচ.
এম. এস. (ডেইরি সায়েন্স)
প্রয়োজনে: 01987899651
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021
Comments 1