আধুনিক জীবনযাপনে বায়ু দূষণ ঘটে চলেছে আমাদের ঘরের ভিতরেও। দূষিত বায়ুতে দীর্ঘদিন বাস করলে দেখা দিতে পারে ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ, হার্ট স্নায়ুতন্ত্র ও কিডনি জাতীয় রোগ। এমনকি হতে পারে ক্যানসারের মতো মারাত্মক ব্যাধীও। আর এই অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণ থেকে বাঁচতে চাইলে আমাদের সবচেয়ে উপকারী বন্ধু হতে পারে ইনডোর প্ল্যান্ট বা ঘরোয়া উদ্ভিদ।
ইনডোর প্ল্যান্ট আমরা আমাদের রান্নাঘরে খুব সহজেই রাখতে পারি এবং আমাদের রান্নাঘর দেখতেও খুব আকর্ষণীয় ও সুন্দর দেখায়। এই ইনডোর গাছ আমাদের পরম-উপকারী বন্ধু। এই গাছগুলি কার্বন ডাইঅক্সাইড তো শোষণ করেই, তা ছাড়াও এরা ঘরের বাতাসের মধ্যে জমে ওঠা নানান বিষাক্ত উদ্বায়ী জৈব যৌগ ও গ্যাস শুষে নেয়। যেমন- বেনজিন, জাইলিন, অ্যাসিটোন, ফর্মালডিহাইড ইত্যাদি। পাশাপাশি এরা অক্সিজেন ছেড়ে বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে।
আমাদের আশেপাশে ঘরোয়া উদ্ভিদের সংখ্যা অনেক। অনেকগুলিই আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে ও বেঁচে থাকে। তাদের মধ্যে সেরা ৮টি ইনডোর গাছ নিয়ে জানা যাক।
১. ইংলিশ আইভি (Hedera Helix)
ইংলিশ আইভি ইনডোর গাছ হিসেবে খুব দ্রুতই বেড়ে উঠে । এটি আমরা আমাদের রান্নাঘরের বেসিন,দেয়ালে খুব সহজেই ঝুলিয়ে রাখতে পারি । এই উদ্ভিদটির সবুজ পাতার সাথে সাদা,হ্লুদ,কালোর ছোয়া আরও অনেক সৌন্দর্য বয়ে আনে। তাই আপনি আপনার রান্নাঘরের সাথে মিলিয়ে এইপছন্দের ভ্যারাইটির গাছটি নিতে পারেন।
উপকারিতা
অক্সিজেন উৎপাদনের পাশাপাশি এই উদ্ভিদটি আমাদের আশেপাশের বাতাসে ছাঁকনির কাজ করে। বাতাসে ভেসে থাকা দূষিত যৌগ যেমন বেনজিন, ফরমালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন শুষে নেয়। ওই যৌগগুলি মানব দেহে ঢুকে ক্যানসার তৈরি করে। ইংলিশ আইভি খুব সহজে জন্মালেও এটি বিষাক্ত বলে বাচ্চা এবং পোষা প্রাণি থেকে দূরে রাখাই শ্রেয়।
২. অ্যালোভেরা (Aloe Barbadensis Mille)
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীতে রয়ছে ২০ রকমের খনিজ। মানবদেহের জন্য যে ২২টা এমিনো এসিড প্রয়োজন তার ৮ টি এতে বিদ্যমান। এছাড়াও ভিটামিন A, B1, B2, B6, B12, C এবং E রয়েছে। আপনি এটি আপনার অনেক প্রয়োজনেই রান্নাঘরে রাখতে পারেন।
উপকারিতা
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী সুপরিচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ ওষধি গাছ। রান্নাঘরে কাজ করতে করতে কোনো কারণে আপনার প্রদাহ হতেই পারে। এই গাছের পাতার ভেতরে স্বচ্ছ পিচ্ছিল ধরনের শাঁস থাকে যাকে অ্যালোভেরা জেল বলা হয়। অ্যালোভেরা থেকে প্রয়োজন মত পাতা কেটে সে থেকে দুই সাইডের কাটা সরিয়ে জেল বের করে প্রদাহের স্থানে লাগিয়ে নিলে অনেকটা আরাম অনুভব হবে এমনকি প্রদাহও সেরে যাবে।
আরও পড়ুনঃ ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – প্রথম পর্ব
৩. কাস্ট আয়রন প্ল্যান্ট (Aspidistra Elatior)
উজ্জ্বল সবুজ পাতার এই উদ্ভিদটি কোনো ঝামেলা ছাড়া সহজেই আমাদের রান্নাঘরে রাখতে পারি। কারণ নিম্ন তাপ, উচ্চ তাপ, অনিয়মিত পানি এসব এর কোনো প্রভাব এই গাছের উপর পড়ে না।
উপকারিতা
এই উদ্ভিদটি দিয়ে রান্নাঘর খুব সুন্দর ভাবেই ডেকোরেশন করা যায়। রান্নাঘরের পরিবেশ যেমনই হোক এই গাছটির বেড়ে উঠতে কোনো অসুবিধাই হয় না এবং রান্না ঘরকে রাখে দূষণমুক্ত।
৪. অ্যালুমিনিয়াম প্ল্যান্ট (Pilea Cadierei)
অ্যালুমিনিয়াম প্ল্যান্ট সবুজ এবং মেটালিক সিলভার রং এর এক ধরণের উদ্ভিদ। এটি রান্নাঘরের সাথে খুব সহজেই মানানসই। এটি যেকোনো পাত্রেই রাখা যায় তাবে সেটা খুব বেশি তাপ এবং ঠান্ডা থেকে দুরে রাখতে হবে।
উপকারিতা
এই উদ্ভিদটির যত্ন খুব সহজেই নেয়া যায়। পাতার সুন্দর রং এর জন্য সবার চোখে পড়ে যায় উদ্ভিদটি। এই উদ্ভিদটি রান্নাঘরের অনেক জায়গাও বাঁচায় এমনকি রান্নাঘরকে বেশ আকর্ষণীয়ও করে।
৫. স্পাইডার প্ল্যান্ট (Chlorophytum Comosum)
এই উদ্ভিদটির যত্নও খুব সহজেই করা যায়,,বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না। যেকোনো পরিবেশেই স্পাইডার প্লাট খাপখাওয়াতে পারে। রান্নাঘরের যেকোনো জায়গায়তেই এটি রাখা যায়।
উপকারিতা
এই উদ্ভিদ সহজে মরে না। খুব বেশি রোদের দরকার হয় না। মাকড়সার মতো ছড়িয়ে বসে ঘর আলোয় ভরিয়ে দেয়। ঝুলানো অবস্থায় দেখলে মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়। গাছটি দূষিত বাতাস বিশুদ্ধ করে, ঘরকে রাখে ধোঁয়ামুক্ত।
৬. বেসিল (Ocimum Basilicum)
এটি হার্ব জাতীয় উদ্ভিদ, সহজেই রান্নাঘরে রাখা যায়। এই উদ্ভিদটির জন্য ঠান্ডা পরিবেশ পরিহার করতে হবে, তবে স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে উদ্ভিদটি ভালো জন্মায়।
উপকারিতা
এই গাছের বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এছাড়াও বাতাসকে পরিষ্কার রাখে এই গাছ।
৭. স্নেক প্ল্যান্ট (Dracaena Trifasciata)
পাতার আকৃতির জন্যই এই ধরনের নাম রাখা হয়েছে গাছটির। এটি এক ধরনের বাহারি গাছ। এই উদ্ভিদটির জন্য প্রচুর পানি অথবা প্রচুর আলোরও প্রয়োজন হয় না।
উপকারিতা
খুব অল্প আলো আর সমান্য পানি পেলেই এরা বেঁচে থাকতে পারে। রান্নাঘরে অনেক ধোঁয়া উৎপন্ন হতে, এই গাছটি ধোঁয়া সরাতে সাহায্য করে এবং অক্সিজেন দিয়ে থাকে। তাছাড়া এটি নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এবং ফর্ম্যালডিহাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাসকে শোষণ করে ঘরকে দূষণমুক্ত রাখে।
৮. মানি প্ল্যান্ট
ইনডোর প্ল্যান্ট বা ঘরোয়া উদ্ভিদ হিসেবে মানি প্ল্যান্টের জুড়ি নেই। তেমন একটা যত্নও লাগেনা। এই গাছ এর সবচেয়ে বড় গুণ হল মাটি ছাড়াও শুধুমাত্র পানিতে এই গাছটি খুব সহজেই বেড়ে উঠে। রান্নাঘর খুব সুন্দর ভাবে এবং সহজেই এই উদ্ভিদটি দিয়ে সাজানো যায়।
উপকারিতা
এটি আমাদের পারিপার্শ্বিক বাতাসকে ফিল্টার করে ঘরে অক্সিজেন চলাচল বৃদ্ধি করে। এছাড়াও দূষণ পদার্থ শোষণ করে ঘর দুষণমুক্ত করে।
আরও পড়ুনঃ কর্মস্থলে ঘরোয়া উদ্ভিদের দুর্দান্ত কিছু উপকারিতা
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021