“একুশ শতকের বৃক্ষ” নামে পরিচিত নিম একটি বহুল প্রচলিত এবং ওষুধে গুণে ভরপুর উদ্ভিদ। বলা হয়ে থাকে, নিমের এমন কোন অংশ নেই যেটা কাজে লাগে না। পাতা, ফল, বীজ থেকে শুরু করে বাকল, শিকড় ইত্যাদি প্রায় সকল অংশ থেকেই মানুষ কিছু নাকি কিছু উপকার পেয়ে থাকে। নিমের বহুমুখী উপকারী ব্যবহারের মধ্যে নিম তেল অন্যতম। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম তেলের বিস্তারিত –
নিম তেল কি?
নিম থেকে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদিত পণ্যগুলোর মধ্যে নিম তেল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিম গাছের বীজ এবং ফলের নির্যাস থেকেই নিম তেল তৈরি করা হয়। জৈব কীটনাশক হিসাবে এর জুড়ি মেলা ভার। সাধারণত খাঁটি নিম তেল উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে সোনালি হলুদ, হলুদাভ বাদামী, কালচে বাদামী, লালাভ বাদামী ইত্যাদি রঙের হতে পারে। খাঁটি নিম তেলে চিনাবাদাম এবং রসুনের গন্ধ মিশ্রিত একটা কড়া গন্ধ পাওয়া যায়। ট্রাইটারপেনয়েড যৌগ থাকার কারণে এটি তেতো স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে।

উপাদান
আজাদিরচটিন (Azadirachtin), ট্রাইটারপেনয়েড, এন্টি অক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই ইত্যাদি।
উপকারিতা
- পোকা মারার অন্যান্য কীটনাশকের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিন্তু নিম তেল সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ায় এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
- এটি ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের হরমোনের ভারসাম্যকে ব্যাহত করে ফলে গাছের যথাযথ ফলন নিশ্চিত হয়।
- জৈব বালাইনাশক এজন্য প্রয়োগের সময় পরিমাণে কিছুটা কম বা বেশি হলেও গাছ বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না।
- পানিতে নিম তেল মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিলে পোকামাকড়, ছত্রাক, মাকড়শা ইত্যাদি জীবাণুনাশ হয়।
- এটি ঔষধি গুণসম্পন্ন
- ফলবান গাছে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়,ফলের কোন ক্ষতি হয়না।
- উপকারী কীটপতঙ্গ এবং মৌমাছির কোন ক্ষতি করে না।
- পরিপক্ক ফল গাছেও ব্যবহার করা যায়। ফুল, ফল, শাকসবজি ইত্যাদি গাছে ফুল ফল সংগ্রহের দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
আরও জানতে পারেনঃ ভালো ক্যাকটাস মাটির আদ্যোপান্ত
ব্যবহার
গাছে সাধারণত স্প্রে হিসাবে নিম তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে স্প্রে বানানোর জন্য ১ লিটার কুসুম গরম পানিতে ২ মিলি যেকোনো লিকুইড সাবান/ হ্যান্ডওয়াশ/ ডিসওয়াশার এবং ৫ মিলি নিম তেল মেশাতে হবে। মিশ্রণটি ঠান্ডা হলে স্প্রে বোতলে ভরে গাছে স্প্রে করে দিতে হবে। আক্রান্ত গাছে সপ্তাহে একবার এবং সুস্থ গাছে প্রতি ১৫ দিনে একবার এই মিশ্রণ ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও মাটিতেও এই মিশ্রণ ব্যবহার করা যায়। যেভাবেই ব্যবহার করা হোক, চেষ্টা করতে হবে বিকালের দিকে ব্যবহার করার।
সংরক্ষণ পদ্ধতি
নিম তেল সাধারণত উৎপাদনের তারিখ হতে দুই বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। তবে এর জন্য যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করা জরুরী। ঠান্ডা এবং শুষ্ক জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণের স্থান অন্ধকার হলে ভালো হয়। রেফ্রিজারেটরেও সংরক্ষণ করা যায় তবে সেক্ষেত্রে জমে যেতে পারে। ফ্রিজ থেকে বের করে হাল্কা গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখলেই তা আবার ব্যবহার উপযোগী হয়ে যাবে।
কোথায় পাবেন?
গাছের জন্য নিম তেল কেনার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে তা যেনো ১০০% বিশুদ্ধ এবং জৈব তেল হয়। বিশুদ্ধ নিম তেলের জন্য Greeniculture Agrotech Ltd এর ওয়েবসাইট বা ফেইসবুক পেইজে যোগাযোগ করতে পারেন। কারণ গ্রিনিকালচার থেকে প্রাপ্ত তেল –
- বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধায়নে নিমের ফল, বীজ থেকে তৈরি তাই সম্পূর্ণ নিরাপদ।
- শতভাগ বিশুদ্ধ এবং স্বাস্থ্যসম্মত।
- বাগানে নিম তেল কেন ব্যবহার করবেন? - August 25, 2021
- ভালো ক্যাকটাস মাটির আদ্যোপান্ত - August 16, 2021
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021